বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম
হাতিয়ার উন্নয়নে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচিকে কাজে লাগানো হবে – মোহাম্মদ আলী এমপি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৩৯ বছর পর জমি ফিরে পেলেন যদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার শিবালয়ে ১৫তম  মাই টিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত  ক্রীড়াবিদরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে- ধর্মমন্ত্রী উজিরপুরে সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশনের সেমিনার অনুষ্ঠিত শিবালয়ে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিবাড়ি খেলা অনুষ্ঠিত লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে ৫ জনের মৃত্যু : আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড ঈদের দিনে সদরঘাটে দুর্ঘটনায় ঝরল ৫ প্রাণ সৌদির সাথে মিল রেখে নোয়াখালীর ৪ গ্রামে ঈদ উদযাপন নোয়াখালীতে দুর্বৃত্তরা ঘর আগুনে পুড়ে দিয়েছে, ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন নোমান-খসরুর ‘দ্বন্দ্বে’ বিপাকে ডা. শাহাদাত

আবদুল্লাহ আল নোমানের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শুরুর দিকে তারা কেবল একে অপরের ঘনিষ্ঠই ছিলেন না; দীর্ঘ সময় একসঙ্গে পথও চলেন। পরে অবশ্য তাদের সেই সুসম্পর্ক আর থাকেনি। এক পর্যায়ে দু’জনের পথ দু’দিকে বেঁকে যায়। তৈরি হয় বিরোধ-বিভেদ। বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই এগিয়ে যেতে থাকেন আমীর খসরু। দলে গড়ে তোলেন শক্ত অবস্থান। বিপরীতে পেছনে পড়ে যান নোমান। বর্তমানে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আমীর খসরু। আর দীর্ঘ দিন ধরে দলের সেই ভাইস চেয়ারম্যান পদেই রয়ে গেছেন নোমান। এ নিয়ে রীতিমতো বিব্রত বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে এই দু’জনকে সমন্বয় করে মাঠে নামাতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনসহ দলের সংশ্নিষ্ট নেতাকর্মীরা। অবশ্য আজ সোমবার নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিনে এ দুই নেতাকে একসঙ্গে মাঠে দেখার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী তারা।

বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পাশাপাশি আবদুল্লাহ আল নোমানকেও দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত করা হয়নি। এ কারণে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান দল থেকে পদত্যাগের পর নোমানও পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন- এমনও গুঞ্জন ছিল। কিন্তু দল ছেড়ে না গেলেও রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন এ নেতা।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়ে যাওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভাবে কোনো অনুষ্ঠান হলেই তাকে প্রধান অতিথি করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। এ কারণে চট্টগ্রামে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যে অনুষ্ঠানের মূল অতিথি আমীর খসরু, সেখানে যেন তাকে আমন্ত্রণ জানানো না হয়। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠানে তাদের দু’জনকে একসঙ্গে দেখা যায়নি বললেই চলে। তবে চসিক নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ার পর থেকে দলের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত ও দল মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে দু’জনকে একসঙ্গে মাঠে চাইছেন দলটির নেতাকর্মীরা। কিন্তু এখানেও ‘বিপত্তি’ তৈরি হয়েছে। চসিক নির্বাচনে প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে আমীর খসরুকে দায়িত্ব দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। ফলে তার নেতৃত্বেই চলছে নির্বাচনী কার্যক্রম। শেষ পর্যন্ত গত শনিবার নোমানকে মেয়র প্রার্থী শাহাদাতের প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামানোর চেষ্টা করা হয়। এ অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মরা এখন আশা করছেন, নেতৃত্বে কিছুটা হলেও ভারসাম্য আসায় এবার হয়তো নির্বাচনী মাঠে দেখা যাবে আবদুল্লাহ আল নোমানকে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দলের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন আমীর খসরু।

চসিক নির্বাচন সামনে রেখে গত ৪ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতাদের নিয়ে প্রথম সমন্বয় সভা করেন নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় দেখা যায়নি নোমানপন্থি বিএনপি নেতাদের। পরদিন নগর বিএনপির বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভায়ও অংশ নেননি তারা। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান দলের মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। নোমানকে মাঠে নামাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। সর্বশেষ গত শনিবার ঢাকায় গিয়ে নোমানের সঙ্গে এ নিয়ে সামনাসামনি কথা বলেন। এতে তার মন গলেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্ট এক বিএনপি নেতা।

জানা গেছে, আমীর খসরুর সঙ্গে দূরত্বের পাশাপাশি চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দল সমর্থিত প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েও মনোক্ষুণ্ণ হন আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, তার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে চট্টগ্রামের হালিশহর-পাহাড়তলী আসনের আওতাধীন সিটি করপোরেশন ১৪ নম্বর লালখান বাজার এবং ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে পছন্দের দুই প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু দু’জনের কাউকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তবে সবাই দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।

এদিকে বিএনপির সমন্বয় সভায় নোমান না থাকায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি নিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাই আসবেন। সবাই কাজ করবেন। মানুষের তো অসুস্থতাও থাকতে পারে। সবাই মিটিংয়ে উপস্থিত নাও থাকতে পারেন। এমনকি কোনো কারণে আমিও না থাকতে পারি।

চট্টগ্রামে দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপির রাজনীতি দুই ধারায় বিভক্ত। বড় একটি অংশের নেতকর্মীরা আমীর খসরুর অনুসারী। আরেকটি অংশের নেতাকর্মীরা রয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর অবশ্য সমকালকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ। চসিক নির্বাচনেও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে আছি। সোমবার প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমানসহ সিনিয়র নেতারা হযরত আমানত শাহর (র.) মাজার জিয়ারত শেষে প্রচারে নামবেন।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: