শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন

সিলেটে বেগুনী ফুলকপি চাষ করে চমক দেখালেন কৃষক সৈয়দুর রহমান

সিলেট থেকে এ. কে. আজাদ ফাহিম :: ফুলকপি আবার রঙিন হতে পারে? যেটা কখনও চিন্তা করেনি সিলেটের সাধারণ মানুষ। সে বেগুনী ফুলকপি চাষ করে রীতিমত চমক সৃষ্টি করছেন কৃষক সৈয়দুর রহমান। পুরো মৌসুম জুড়ে প্রতিদিনই অনেক দূরদূরান্তের মানুষ দেখতে এসেছেন তার রঙিন ফুলকপি। অনেক বিশিষ্ট নাগরিকও এসেছেন তার বেগুনী ফুলকপির ক্ষেতে। সৈয়দুর রহমান দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের মন্দিরখলা গ্রামের একজন প্রগতিশীল কৃষক। কৃষিতে নিত্য-নতুন প্রযুক্তি ও জাত নিয়ে বরাবরই যার আগ্রহ। গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে কৃষিতে নতুন কিছু করাই তার নেশা।

সেই ধারাবাহিকতায় সৈয়দুর রহমান এবার চাষ করেছেন বেগুনী ফুলকপি। বাড়ির পাশে প্রায় ১ বিঘা জমিতে তিনি বানিজ্যিক ভাবে চাষ করেছেন বেগুনী ফুলকপি।

প্রথমে জেনে নেই এ বেগুনি ফুলকপি নিয়ে কিছু অজানা তথ্যঃ-
বেগুনী ফুলকপি বা Purple Cauliflower যার আরো নাম হচ্ছে- সিসিলিয়ান ভায়োলেট/ ভায়োলেট কুইন/ গ্র্যাফিটি কলিফ্লাওয়ার।
দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইতালী এ ফুলকপির উৎপত্তিস্থল। বেগুনী রঙের বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হলেও এজাতটি হাইব্রিড নয় তবে উচ্চ ফলনশীল জাত।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট অ্যান্টোসায়ানিন থেকে এ ফুলকপি তার সুন্দর এবং আকর্ষণীয় রঙ পায়। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘সি’ থাকে। রঙ যেমনই হোক না কেন, স্বাদ সাধারণ ফুলকপির মতো প্রায় একই। তবে এর পুষ্টি গুনাগুন সাধারণ ফুলকপির চেয়ে বেশি।

এর উপকারি গুনাগুণের মধ্যে রয়েছেঃ- রক্তনালীর ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং কোলাজেন ধ্বংস প্রতিরোধ করে। সাধারণ ফুলকপির চেয়ে বেগুনি ফুলকপিতে ২৫ শতাংশ বেশি বিটা ক্যারোটিন থাকে। যা ত্বক, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি এবং চোখকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। অ্যান্টোসায়ানিন গুলি তাদের শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে বাতজনিত আর্থাইটিসের মতো কিছু প্রদাহ নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।

কিভাবে তিনি এ বিশেষ বৈশিষ্টের ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়েছেন সে গল্প শুনতে চাইলে সৈয়দুর রহমান জানান, তিনি ফেসবুকে প্রথম এ ফুলকপি দেখেছেন। সেখান থেকে তার আগ্রহ জাগে রঙিন ফুলকপি চাষের। তারপর কৃষি বিভাগের ঢাকাস্থ একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তায় বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার কারনে দুইবারই বীজ নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও তিনি হতাশ হননি। পরবর্তীতে তৃত্বীয়বারে সংগ্রহ করা বীজ দিয়ে তিনি সফল হন। এরপর নিয়মিত নিবিড় পরিচর্যা করেন। সহযোগিতা নেন কৃষি কর্মকর্তাদের। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্রেশ তালুকদার নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে গেছেন বলে জানান তিনি।

ফুলকপির এ উপশী জাতটির ব্যবস্থাপনাটা কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার এ জমিতে কোনোরকম রাসায়নিক সারের ব্যবহার করিনি। ব্যবহার করেছি ভার্মি কম্পোস্ট মানে কেঁচো সার। কোনোরকম কীটনাশকও ব্যবহার করিনি। তবুও প্রতিটির ওজন ২-২.৫ কেজি পর্যন্ত হয়েছে।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ‍কৃষিবিদ শামীমা আক্তার বলেন, আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় কৃষকের পাশে থাকি। কৃষকরা যাতে নতুন কিছু করে সেজন্য উদ্বুদ্ধও করে থাকি। সাধ্যমতো সকল সহযোগিতা আমরা করে থাকি। সৈয়দুর রহমানের মতো উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও নিত্য-নতুন কিছু করতে এগিয়ে আসবেন আশা করি।
বেগুনী ফুলকপি চাষ করে সৈয়দুর রহমান অনেক খুশি। কারণ প্রথম দিকে তিনি প্রতি পিছ ফুলকপি ৮০-১০০ টাকা বিক্রি করেছেন। পরবর্তীতে আরো কমে বিক্রি করলেও সাধারণ ফুলকপির তুলনায় বেগুনী ফুলকপি চাষ করে বেশ লাভবান হতে পেরেছেন বলে তিনি জানান।

সৈয়দুর রহমান রহমান একনাগারে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা আবার একজন কৃষক সংগঠকও বটে। তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কৃষি উৎপাদক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং মোল্লারগাঁও সিআইজি ফসল সমবায় সমিতির সফল সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দীর্ঘ দিন দায়িত্বপালন করে আসছেন।

বর্তমান সময়ে নিরাপদ খাদ্যের যে দাবি সে আন্দোলনেরও একজন অগ্রসর কর্মী সৈয়দুর রহমান। তিনি নিজের উৎপাদিত ফসলে যেমন রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করেন ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। তেমনি ভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্পের আওতায় এগ্রিকালচার ইনোভেশান ফান্ড এর অর্থায়নে গড়ে তুলেছেন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন, ব্যবহার ও বিপণন প্রকল্প। যার মাধ্যমে আশপাশের কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করে চলেছেন মাটির প্রাণ জৈব সার।

সৈয়দুর রহমান অতিতেও এ অঞ্চলে সবার আগে চাষ করেছেন- ব্রোকলি, রেড ক্যাবেজ, লেটুসপাতা, ক্যাপসিকাম প্রভৃতি অপ্রচলিত ফসল। যা পরবর্তীতে বানিজ্যিকভাবে এ অঞ্চলে জনপ্রিয়তা পায়।

সৈয়দুর রহমানের হাত ধরে যে বেগুনি ফুলকপির বানিজ্যিক চাষের হাতেখড়ি। আমরা আশাকরি এ ফুলকপি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবেন। ভবিষ্যতে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে বেগুনি ফুলকপি।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: