শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৯ অপরাহ্ন

দেশে পরিবেশ বান্ধব কৃষি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আহবান বোপমা সভাপতির

মতিনুজ্জামান মিটু : মানুষসৃষ্ট বিভিন্ন দূষণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গোটা বিশ্ব ধ্বংস হতে চলেছে। বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফাকচারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মু. আব্দুস ছালাম এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রকৃতি সম্ভবত প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করেছে। আর একারণেই গোটা দুনিয়া এখন সার্বিক সংকটে। এসংকট থেকে মুক্তি পেতে নিরাপদ কৃষি এবং নিরাপদ খাদ্য ফিরে আনা আবশ্যক। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বায়ুদূষণ করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক। অল্প কয়েকটি দেশ বাদে বাকি সব দেশের অবস্থা সম্ভবত এদেশের চেয়েও খারাপ।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের মতে, ‘করোনা প্রতিরোধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই মূল বিষয়’। অথচ নানা রোগে আক্রান্ত বিশ্ব সমাজকে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তথাকথিত করোনার আগমণের জন্য। ইতালির যেসব অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ বেশি হয়েছে, সেখানে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি। অথচ, ভূলেও বায়ুদূষণের কথা বলা হচ্ছে না।

প্রকৃতি ধ্বংসে মানুষের খাদ্যাভ্যাস বা অসার খাদ্যই দায়ী। সম্ভবত পৃথিবীর ১শতাংশ মানুষও কৃষি এবং খাদ্য বিষয়ে মনোযোগী নন। অথচ মানুষের দেহটা ওখানেই সঁপে দেওয়া। উল্লেখ্য, মানুষের বর্তমানের খাদ্যাভাস বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য প্রায় ২৫শতাংশ দায়ী।
বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফাকচারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আরও বলেন, দেশে চলমান সার্বিক সংকটে জলবায়ু এবং পরিবেশকে সমুন্নত রাখার বিকল্প নেই। এজন্য দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করে মাটি, মানুষ এবং প্রাণীসম্পদকে স্বাস্থ্যবান করতে হবে। এলক্ষ্যে দেশে পরিবেশ-বান্ধব কৃষি এবং প্রতিটি ইউনিয়নে পরিবেশ-বান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে নতুন এবং তরুন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

কতিপয় সুপরিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, এক কেজি হাইব্রীড ধান উৎপাদনে প্রায় ৪০০০ লিটার পানি সেঁচ দিতে হয়, ক্ষতিকারব রাসায়নিক সার এবং জীবনঘাতী রাসায়নিক কীটনাশক তো আছেইঅ অপরদিকে, সব্জি উৎপাদনে কি পরিমাণ পানি সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় তাও প্রায় সবাই জানে।

বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফাকচারার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আসন্ন এ মহাবিপদ এড়াতে কৃষকদেরকে নিরাপদ কৃষি যেমন হারিয়ে যাওয়া সব জাতের ধান, গম, কাউন, যব, ঢেমশি, চীনা, বজরা, ভূট্টা, সয়াবীন, অড়হড়, ফ্যালন, খ্যাসারিসহ সবধরণের ডাল, কাঁঠাল, আমলকি, তরমুজসহ সব দেশী ফল, মূলা, টমেটোসহ সব দেশী সব্জি, সুগারবিট, খেজুর, তাল, গোলপাতা প্রভৃতি পুষ্টিকর ফসল ও খাদ্য উৎপাদনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এসব ফসল বিনা সেঁচে অথবা সামান্য সেঁচে শুধুমাত্র পরিবেশ-বান্ধব জৈবসার এবং জৈব কীটনাশক দিয়ে উৎপাদন করা যায়। অথচ বর্তমানের আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য প্রায় ৩০শতাংশ দায়ী।

বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফাকচারার্স এসোসিয়েশন প্রতিটি ইউনিয়নে পরিবেশ-বান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেমন আতপ চালের জন্য হাস্কিং মিল, আটা মিল, রাইস প্রোটিন পাউডার, সিরাপ, মল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, খাদ্য এবং শিশুখাদ্য কারখানা, পথ্যজাতীয় খাদ্যের কারখানা, সব্জি এবং ফল প্রোসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ, পাট, কলাগ্ছ, নারিকেল, হোগলা, আনারস হতে সুতা, চট, কাপর, ব্যাগ, রশি উৎপাদনের কারখানা ইউনানী ও ভেসজ ঔষধ এবং প্রসাধনী কারখানা, পশুখাদ্যের কারখানা, পশুপালন খামার সৌরবিদ্যুৎ চালিত গাড়ির কারখানা প্রভৃতি স্থাপনে আগ্রহী তরুন উদ্যোক্তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।

উলেখিত, পরিবেশ-বান্ধব কৃষি পণ্য উৎপাদন এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, জাইকা, কোইকা, জিসিএফ, বিশ্ব ব্যাংক, আইডিবিসহ অনেক সংস্থা স্বল্প অথবা বিনা সুদে ঋণ দেবে।

এসোসিয়েশন কর্মঠ, আগ্রহী এবং উদ্যমী তরুন উদ্যোক্তাদেরকে পরিবেশ-বান্ধব কৃষি পণ্য উৎপাদন এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরী এবং জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: