সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন

বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বাড়ছে

গাজী আরিফুর রহমান, বরিশাল ব্যুরো প্রতিনিধি :: বরিশালে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা। বিভাগে গত ২০ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জুলাই ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক তিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী, উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জে। এদিন বাকেরগঞ্জে ছয়, গৌরনদীতে এক ও উজিরপুরে ছয়জন নিহত হন। পরে ২৪ জুলাই বরিশালের কাশিপুরের ছয়মাইল এলাকায় আরও একজন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন।

এর আগে গত ২৯ মে উজিরপুরে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহত হন ১০ জন। এ যেন মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। বরিশালের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে এক বছরের ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে শতকরা ৬১ ভাগ। একই সঙ্গে ৫৩ ভাগ বেড়েছে হতাহতের সংখ্যা। অদক্ষ চালকের বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালনাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করেছেন বিচারের।

বোনের বিয়ের বাজার করে স্বামী, সন্তানসহ একই পরিবারের চারজন মিলে অটোরিকশায় গত বুধবার দুপুরে বাকেরগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তানজিলা বেগম। এ সময় বিআরটিসি বাসের চাপায় প্রাণ হারান তিনজন। গুরুতর আহত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন নিহত সাথীর স্বামী।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ২৭৬ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১১১ জন আর আহত হয়েছেন ৫৬১ জন। একই সময়ে গত বছর দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৭১টি, যাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫৭ জন এবং আহত হন ৩০১ জন। বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল মন্নানের দাবি, দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

বরিশালের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের হিসাব বলছে, পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরুর পর থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে নারী এবং শিশুসহ ২৯ জন। যার মধ্যে ২০ ও ২১ জুলাই ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সব থেকে বড় দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুরে। এই দুটি ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। তা ছাড়া যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগ বরিশাল জেলার সীমান্ত গৌরনদীর ভুরঘাটা থেকে বাকেরগঞ্জের লেবুখালীর মধ্যে। ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে হঠাৎ করে দুর্ঘটনার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এই অঞ্চলের মানুষ। দাবি তুলেছেন নিরাপদ সড়কের।

নিরাপদ সড়ক চাই বরিশালের আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির গতিসঞ্চার করেছে। সেতু উদ্বোধনের পর এই অঞ্চলে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আগে যাওয়ার প্রবণতা। চালকরা কত দ্রুত বরিশাল থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে বরিশালে পৌঁছাতে পারেন, সেই প্রতিযোগিতা বেড়েছে। কিন্তু সড়ক প্রশস্ত হয়নি। বর্তমান সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার এটি একটা বিশেষ কারণ।

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে মহাসড়কে যানবাহনের প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এই প্রতিযোগিতা যে শুধু চালকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, সেটা কিন্তু না; যাত্রীদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা বেড়েছে।

বরিশালে দুর্ঘটনা অনেক বেড়েছে স্বীকার করে সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ বরিশাল বিভাগের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) জিয়াউর রহমান বলেন, গাড়ির মালিকরা ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় দক্ষতার সনদ দেখিয়ে যে চালক নিয়োগ দিয়েছে বলে দেখান, তারপর আর তারা গাড়ি চালান না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলছেন, ‘সড়কে দুর্ঘটনা রোধে সরকারি নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: