রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫০ অপরাহ্ন

উন্নয়ন সহযোগীরা দেবে ৩৬ হাজার কোটি টাকা

সদ্য শেষ হওয়া বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শেষে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বড় অঙ্কের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। আগের বিডিএফ সম্মেলনে উন্নয়ন সহযোগীরা সরাসরি কোনো প্রতিশ্রুতি দিত না। এবার মোট ৪২৫ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধারে)। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এসব অর্থ পাবে বাংলাদেশ।

গতকাল রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নিজ দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিডিএফ সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) থেকে, ২৭০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ২২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিশ্র“তি মিলেছে সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) থেকে, ১২০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রতিশ্র“তি পাওয়া গেছে ৩৫ কোটি ডলারের। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বিডিএফ সম্মেলনে কী পেলাম কী পেলাম না, নিশ্চয়ই আপনাদের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। আগের বিডিএফ সম্মেলনে সাধারণত উন্নয়ন সহযোগীদের আমরা নীতিকৌশল সম্পর্কে অবগত করতাম। এবারের সম্মেলনে নীতিকৌশলের পাশাপাশি অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের জন্য ঋণের শর্ত শিথিলের বিষয়টিও জোর দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, জাইকার যেসব প্রকল্প এখন চলমান আছে, তার বাইরে অতিরিক্ত আরও ছয়টি প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে রাজি হয়েছে জাইকা। ওই ছয়টি প্রকল্পে ২৭০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বাংলাদেশের অন্যতম অকৃত্রিম বন্ধুপ্রতিম সংস্থা জাইকা। তবে কোন ছয়টি প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পরে বৈঠক করে চূড়ান্ত করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) নিয়ে বিডিএফ সম্মেলনে অনেক আলোচনা হয়েছে। জিসিএফ থেকে আগে অনেক প্রতিশ্র“তি মিললেও অর্থ ছাড় হয়নি। বিডিএফ সম্মেলনে আমাদের তরফ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে। তবে বিডিএফ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা জিসিএফের নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, আগামী চার বছরে জিসিএফ তহবিল থেকে বাংলাদেশকে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হবে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। জার্মান ওয়াচের সবশেষ তথ্য মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এসব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশকে আগামী চার বছরে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হবে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্বব্যাংকের এখন তিনটি প্রকল্প চলমান। ওই তিনটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৩৫ কোটি ডলার অনুদান দিচ্ছে। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ২ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বব্যাংককে বলেছি, তোমরা শুধু রোহিঙ্গাদেরই সহযোগিতা করছ। কক্সবাজারের স্থানীয়দের কোনো সহযোগিতা করছ না। এতে করে সেখানে একধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয়দের যাতে বৈষম্য না হয়, সে জন্য বিশ্বব্যাংক নতুন আরও তিনটি প্রকল্পের বিপরীতে ৩৫ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছে। স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ও স্থানীয় রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে এই টাকা খরচ হবে। এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাতারাতি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এটা বাস্তবতা। আমাদের আর কী করার আছে? আমরা তো সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছি তাদের ফেরত পাঠাতে। মামলা হলো। মামলায় আমরা জিতেছি। কিন্তু তাদের তো পাঠানো যাচ্ছে না। যত দিন তারা থাকবে, সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি স্থানীয়রা যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় সে জন্য বিশ্বব্যাংকের এই টাকা খরচ হবে। বিশ্বব্যাংকের ৩৫ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে মিলবে।

এর আগে সবশেষ বিডিএফ সম্মেলন হয়েছিল দুই বছর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। দুই বছর পর পর উন্নয়ন সহযোগীদের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সরকার। ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া বিডিএফ এবারসহ মোট চারবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিডিএফের আগে এর নাম ছিল প্যারিস কনসোর্টিয়াম। এবারের বিডিএফ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রীরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, ঋণের শর্ত শিথিল করতে। একই সঙ্গে প্রেসক্রিপশন নয়; উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়ার কথাও বলেছেন মন্ত্রীরা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে আগে যেসব শর্ত দেওয়া হতো, আমরা তাদের বলেছি শর্তগুলো শিথিল করতে। তারা রাজি হয়েছে শর্ত শিথিলে। আমরা যেসব শর্ত পূরণ করতে পারব, কেবল সেসব শর্তই আমরা গ্রহণ করব। যেসব শর্ত পূরণ করতে পারব না; তা গ্রহণ করতে পারব না।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: