শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

যানজট নিরসনে কার্যকরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

নানামুখী সমস্যায় ঢাকা মহানগরের জীবনযাত্রা ক্রমেই আরও বেশি মাত্রায় দুর্ভোগময় হয়ে উঠছে। সবচেয়ে প্রকট ও জটিল সমস্যাটি হলো যানজট। এটা নিয়ে অনেক বছর ধরে অনেক কথা বলা হচ্ছে, নানা রকমের উদ্যোগের কথাও মাঝেমধ্যে শোনা যায়, কিন্তু এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, বরং তা দিনে দিনে আরও প্রকট হচ্ছে।

পৃথিবীর অনেক ধনী ও উন্নত দেশের বড় বড় শহরে যানজটের সমস্যা আছে, কিন্তু ঢাকা মহানগরের যানজট সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে-এই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি স্বল্প সময়ে ঘটেনি। আমাদের চোখের সামনে এই সমস্যা পুঞ্জীভূত হতে হতে আজ এই পরিণতি। কিন্তু এটাও শেষ পরিণতি নয়। কারণ, যানজট ক্রমেই আরও বেড়ে চলেছে এবং সামনের দিনগুলোতে স্পষ্টতই আরও বাড়বে। কবে, কোন দূর ভবিষ্যতে গিয়ে যানজট বৃদ্ধি থেমে যাবে, তা এ মুহূর্তে বলা প্রায় অসম্ভব। কারণ, সমস্যাটি সমাধানের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেই। বরং আমাদের সংশয়, এটা সমাধানের চিন্তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর আদৌ আছে কি না।

ঢাকার যানজট শুধু সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার ফল নয়। আরও কয়েকটি বড় কারণ আছে। প্রথমত, প্রায় দুই কোটি মানুষের এই মহানগরে সড়কের তুলনায় যানবাহনের যে প্রাচুর্য সৃষ্টি হয়েছে, তা একেবারেই অস্বাভাবিক। বিদ্যমান সড়কব্যবস্থায় সর্বোচ্চ কতসংখ্যক যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারে, তা বিবেচনায় না নিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যানবাহন নিবন্ধন করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।

সড়কপথের যানজট নিরসনে সারাবিশ্বে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- একমুখী রাস্তা, রিং রোড বা চক্রাকার পথ, গোলচত্বর, উড়ালপথ, পাতালপথ, সুড়ঙ্গপথ ইত্যাদি। একমুখী রাস্তা, রিং রোড বা গোল চত্বর- এসব তৈরি করা হয় ভূপৃষ্ঠে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব থেকে কিছুটা উপকার পাওয়া গেলেও যানজট থেকে পুরোপুরি মুক্তিলাভ হয়নি। আর এগুলো সব জায়গায় সব সময় তৈরির বাস্তব অবস্থাও থাকে না। ফলে যানজট সমস্যাও দূর হয় না।

যানজট কিছুমাত্র কমাতে চাইলে প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে ঢাকা মহানগরে মোট কতসংখ্যক যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে, পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজনে নতুন নিবন্ধনের সংখ্যা নির্ধারিত হবে। দ্বিতীয়ত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে বড় আকারের বাসের সংখ্যা বাড়ানোর নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা ক্রমাগত এটা বলে আসছেন।

ঢাকা মহানগরের মোট সড়কের প্রায় ৫০ শতাংশ জুড়েই চলাচল করে ব্যক্তিগত গাড়ি, অথচ এগুলো বহন করে মাত্র ১২ শতাংশ যাত্রী। কিন্তু ৫০ শতাংশ বড় বাসে প্রায় ৮৮ শতাংশ যাত্রী পরিবহন সম্ভব। তাহলে আমাদের করণীয় কী, তা খুবই স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, উন্নত মানের ফ্র্যাঞ্চাইজভিত্তিক বাসসেবা চালু করাই আমাদের সর্বোত্তম বিকল্প। এ ছাড়া যা করা দরকার, তা হলো ফুটপাতগুলোকে হাঁটাচলার উপযোগী করা এবং সড়কের দুপাশে যানবাহন পার্কিং পুরোপুরি বন্ধ করা।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: