শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সঠিক পরিকল্পনা

নিউজ ডেস্ক :: উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বর্তমানে প্রায় সব শিক্ষার্থী পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তা তাদের নিত্যদিনের স্বপ্ন। যদি সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বপ্নের পেছনে না ছোটা হয়, তা হলে ওই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে স্বপ্ন পূরণ করা অসম্ভব কিছুই নয়। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সঠিক পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন- শাহিন আলম শাওন

আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য কোন দেশে যেতে ইচ্ছুক, ওই দেশ কেমন হবে, সেখানে স্কলারশিপের ব্যবস্থা আছে কিনা; পার্টটাইম কাজের সুযোগ আছে কিনা; আবার যে প্রোগ্রাম ও কোর্স করার জন্য যেতে চাইছেন, ওই কোর্সটি দেশে কোথাও করা যায় কিনা; আর করা গেলেও দেশে এবং বিদেশে কী কী সুবিধা-অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন- এসব বিষয় সম্পর্কে তুলনামূলক ধারণা রাখতে হবে আপনাকে। এসব দিক বিবেচনা করেই আপনাকে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। আজ আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।

প্রথমেই দেশ নির্বাচন

বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে একটি দেশ নির্বাচন করতে হবে- যেখানে আপনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। নিজেকে উচ্চমানে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। তবে শুধু বিদেশ হলেই হয় না। কারণ সব দেশের শিক্ষার মান ও শিক্ষাব্যবস্থা এক নয়- এ বিষয়টি সবার আগে মাথায় রাখা উচিত। এশীয় দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া ও চীন এবং ইউরোপের মধ্যে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, কোরিয়া, রাশিয়া, আমেরিকা ইত্যাদি দেশ মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। অনেকে আবার নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, হংকং, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য পাড়ি জমান।

বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন

বিদেশে কেউ স্নাতক, কেউ স্নাতকোত্তর, কেউ বা পিএইচডি করতে যান। আপনি কোন স্তরের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, সেটি ঠিক করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বয়সের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আপনি কোন বিষয়ে পড়তে যাবেন, সেটিও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী বিদেশে ডিপ্লোমা, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি- যে কোনো লেভেলে পড়তে যেতে পারেন। আপনি চাইলে প্রচলিত বিষয়গুলোর বাইরেও একবারে নতুন একটি বিষয় নির্বাচন করতে পারবেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে চাহিদা রয়েছে এসব বিষয় নির্বাচন করা যেতে পারে। মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসায় প্রশাসন, কমার্স, আর্টস, সায়েন্স, মেরিন ইত্যাদি হতে পারে আপনার উচ্চশিক্ষার বিষয়। দেশ ও বিষয় নির্বাচন হয়ে গেলে আপনাকে সঠিক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ভৌগোলিক অবস্থান, টিউশন ফি, বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আবাসিক সুবিধা, বৃত্তির ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিয়ের অবস্থান, পড়াশোনার পদ্ধতি, ভর্তির প্রাথমিক যোগ্যতা, খরচ ইত্যাদি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে। এ জন্য আপনি চাইলে গুগল থেকে বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারবেন।

মূল সনদ সংগ্রহে রাখা

আপনাকে শিক্ষা বোর্ড বা স্কুল-কলেজ থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মূল সনদ ও নম্বরপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে। স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে স্নাতকের মূল সনদ ও নম্বরপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করার ক্ষেত্রে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত খামে সনদ পাঠাতে হয়- এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সঙ্গে মূল সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সনদ সত্যায়িত করে রাখতে হবে।

পাসপোর্ট তৈরি রাখা

উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা সময়ের আগে থেকেই পাসপোর্ট করে রাখা ভালো। কারণ বিদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোয় আবেদনের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট নম্বরের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্নও হতে পারে। এ ছাড়া আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট, জিম্যাট, জিআরই পরীক্ষা দিতে পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে পাসপোর্টে নামের বানান অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সনদের মতোই হতে হবে। কারণ বানানের গরমিলের জন্য অনেকেই ভর্তি বা বৃত্তির আবেদন করতে পারেন না।

খরচ ও স্কলারশিপ

আপনি যে দেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, ওই দেশের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে ভালো ও স্পষ্ট ধারণা নিতে হবে। সবাই তো উন্নত জীবনমান ও মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেলে তা লুফে নিতে চান। তবে সুযোগ লুফে নেওয়ার আগে অবশ্যই লেখাপড়া ও জীবনযাত্রা খরচের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যদি নিজ খরচে পছন্দের কোর্স সম্পন্ন করতে চান, তা হলে আপনাকে অবশ্যই কোর্স সম্পন্ন করতে সর্বমোট কত খরচ হতে পারে এবং কীভাবে পরিশোধ করতে হবে- এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। আপনি চাইলে আপনার পছন্দকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইমেইল করে মোট খরচের একটি খসড়া হিসাব ও পরিশোধের পদ্ধতি জেনে নিতে পারবেন।

যারা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যেতে ইচ্ছুক, তাদের বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমে দেখতে হবে স্কলারশিপের মেয়াদ কতদিন, সেটি নবায়ন করা যাবে কিনা। স্কলারশিপ যদি নবায়ন করাও যায়, তা হলে সেটি কী ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে- এটি জানতে হবে। স্কলারশিপের অর্থে কী কী খরচ করা যাবে, তা জেনে রাখাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

ভর্তির শর্ত পূরণ

প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভর্তির শর্তগুলো থাকে। আপনি বিষয়ভেদে এবং কোন লেভেলে পড়াশোনা করতে যাবেন, এর ওপর নির্ভর করে শর্তগুলো। কোনো শিক্ষার্থীকে অবশ্যই প্রতিটি শর্ত পূরণ করতে হয়। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা। যদিও ইউরোপের অনেক দেশে বিষয়টির ক্ষেত্রে শিথিল রয়েছে- তবুও কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে আইইএলটিএস (ওঊখঞঝ), অনেক দেশে এজঊ, ঝঅঞ, এগঅঞ, ঞঙঋঊখ পরীক্ষার মাধ্যমে ভাষাজ্ঞান প্রমাণ করতে হয়।

ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু ও শেষ হওয়ার তারিখ

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক, অবশ্যই সেখানে কোন তারিখে ভর্তির আবেদন শুরু হয় এবং কবে শেষ হয়- এ সম্পর্কে বিস্তারিত ও পরিষ্কার জ্ঞান রাখতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র দিতে হয়। আপনি সহজেই আপনার পছন্দকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা থেকে এ তথ্য জেনে নিতে পারবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র।

পাসপোর্টের কপি (বর্তমান ও আগের পাসপোর্টের ব্যবহৃত পাতা)।

আবেদন ফরম।

জন্ম সনদ।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অনুমতি সংক্রান্ত চিঠি (কনফারমেশন অব এনরোলমেন্ট)।

স্বাস্থ্যবীমার প্রমাণপত্র।

শিক্ষাগত যোগ্যতা (সব বোর্ড পরীক্ষার সার্টিফিকেট) ও কর্মঅভিজ্ঞতার সনদ।

পূরণকৃত অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে (স্পন্সর বা গ্রান্টর) ফরম।

স্পন্সরের সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে জন্ম সনদ, পাসপোর্ট কিংবা স্কুলের কাগজপত্র।

স্পন্সরের আয়ের উৎসের বিস্তারিত কাগজপত্র।

সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করার ইতিহাস থাকলে সেখানে কাজের রেকর্ড ও ছাড়পত্র।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (১২ মাসের বেশি পুরনো নয়)।

বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী, সন্তানদের সম্পর্কে প্রমাণ হিসেবে জন্ম সনদ ও বিয়ের সনদ।

স্বামী-স্ত্রী কেউ মারা গিয়ে থাকলে বা বিচ্ছেদ হয়ে থাকলে মৃত্যু সনদ কিংবা বিচ্ছেদ সংক্রান্ত কাগজপত্র।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রমাণপত্র।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: