শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ন

জাবিতে গণরুম চালু : অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

জাবি প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনসংকট নিরসন ও গণরুম সংস্কৃতি বিলুপ্তির লক্ষ্যে ১০ তলাবিশিষ্ট নতুন ছয়টি হল নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি হল খুলে দেওয়ার চার মাস না পেরোতেই একটি হলে ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে গণরুম চালুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর হলে এ ঘটনা ঘটলেও তা জানেন না হল প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হলের চতুর্থ তলার ৪২২ ও ৪২৩ নম্বর কক্ষ নিয়ে গণরুম চালু করা হয়েছে। কক্ষের চৌকিগুলো সরিয়ে মেঝেতে তোশক দিয়ে শয্যা তৈরি করা হয়েছে। কক্ষ দুটিতে চারজন করে আটজনের আসন বরাদ্দ রয়েছে। তবে সেখানে ১৪ জন করে মোট ২৮ জনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী। গত রোববার থেকে সেখানে থাকছেন শিক্ষার্থীরা।
খবর নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ১০তলাবিশিষ্ট নতুন ছয়টি হল নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি দুটি হল উদ্বোধন করা হয়। হলগুলোতে ৪৬তম ব্যাচ (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) থেকে ৫০তম ব্যাচের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না মেনে ৫১তম ব্যাচের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণরুম চালু করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, হলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে ছাত্রলীগ নেতারা গণরুম চালু করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উঠিয়েছেন।
গণরুমে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হলগুলোতে অবস্থান করছিলেন। দ্রুত আসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিতে ৫০তম ব্যাচের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা তাঁদের এই হলে উঠিয়েছেন। তবে ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নাম জানতে চাইলে তাঁরা কেউই কিছু বলতে রাজি হননি।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জোবায়েদ আশিক ও শেখ রাজুর নির্দেশে গণরুম চালু করা হয়েছে। তাঁরা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া তাঁরা ২১ নম্বর হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।
অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে জোবায়েদ আশিক বলেন, ‘বিষয়টি পুরো জানি না। তবে যত দূর শুনেছি, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা নিজে থেকে এসেই থাকছে। আমি পুরো ঘটনা জেনে জানাব। শেখ রাজু বলেন, এমন কোনো ঘটনা এখনো শুনিনি। সুতরাং গণরুম চালুর সঙ্গে আমার জড়িত থাকার বিষয়টি সঠিক নয়।
হল ওয়ার্ডেনের দায়িত্বে থাকা অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রনি হোসাইন গতকাল আমাদেরকে বলেন, আমি মাত্র শুনলাম। যেহেতু জানতে পারলাম, আমরা কক্ষগুলো পরিদর্শনে যাব। যদি এ ধরনের কাজ হয়ে থাকে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় আমাদেরকে  বলেন, আমরা ২০১৮ সাল থেকে শুনে আসছি নতুন হলগুলো হলে গণরুম থাকবে না। সেখানে কৃত্রিম সিটসংকট তৈরি করে গণরুম করছে ছাত্রলীগ। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন হলের গণরুম তুলে দিতে হবে। না দিতে পারলে তাঁরা আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবেন।
২১ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ মো. তাজউদ্দীন সিকদার আজ সকালে সাংবাদিকদের বলেন,  এ বিষয়টি কিছুই জানতাম না। পরে কয়েকজন সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারলাম।
আমি পরে বিষয়টি খোঁজ খবর নিতে শিক্ষকদের পাঠিয়েছিলাম। তবে যত দূর জেনেছি, তারা স্থায়ীভাবে থাকার জন্য কেউই  আসেনি।
এবিষয়ে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। আজ সকালে আবার যোগাযোগ করা হলে তাঁর একান্ত সচিব বলেন, উপাচার্য মিটিংয়ে আছেন বলে ফোনটি রেখে দেন।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: