শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

গুজব ঠেকাতে ‘কৌশল’ ৪ শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বই এখনো ছাপাখানায় দেয়নি এনসিটিবি

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই আগামী শিক্ষাবর্ষে পুরোদমে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। পাল্টে যাচ্ছে পাঠ্যবইও। বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন শিক্ষাক্রমের চকচকে বই পৌঁছে দিতে দিন-রাত চলছে বই ছাপানোর কাজ। তবে চারটি শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বই এখনো ছাপাখানায় পাঠানো হয়নি। বইগুলো ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র বলছে, ২০২৩ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই পড়ানো হয়। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বিবর্তনবাদ অধ্যায় নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। যদিও এনসিটিবির ভাষ্য, বইটির ওই অধ্যায় নিয়ে ‘গুজব’ ছড়ানো হয়।

সমালোচনার মুখে অধ্যায়টি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। ‘গুজব’ এবং ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে এবার সামাজিক বিজ্ঞান বই ছাপানোর ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে এনসিটিবি। চলছে শেষ সময়ের খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা। একেবারে শেষ মুহূর্তে ওই চারটি পাঠ্যবই ছাপাখানায় পাঠানো হবে।

চারটি পাঠ্যবই এখনো ছাপাখানায় না পাঠানোর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খোদ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ইউনিটের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হ্যাঁ, ওগুলো এখনো প্রেসে দেইনি আমরা। দেখেছেন তো নিশ্চয়ই গতবার সামাজিক বিজ্ঞান বই নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা উঠেছিল। বুঝে-না বুঝে অনেকে সমালোচনা করেছেন। যাই হোক, সেসব নিয়ে কথা না বলাটাই ভালো। তখন আমরা কিন্তু সবার মতামতকে শ্রদ্ধা করে সেগুলো বাদ দিয়েছি।’

অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘এবার যাতে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারেন, সেজন্য বাড়তি সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আমরা চাই না যে, বই ছাপানোর পর তাতে সংশোধনী যুক্ত করা হোক। এজন্য ওই চারটি বই সবশেষে প্রেসে পাঠানো হবে। তবে অন্য বইগুলোর সঙ্গে একসঙ্গে এবং যথাসময়ে শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পাবে।’

সমালোচনার মুখে ২০২৩ সালের ষষ্ঠ-সপ্তমের অনুসন্ধানী পাঠ প্রত্যাহার করা হয়/ছবি: সংগৃহীত

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তড়িঘড়ি করে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে সরকার। নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে নানা ভুল, অসঙ্গতি ও বিভ্রান্তিকর তথ্য আসার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সমালোচনার মুখে শিক্ষাবর্ষের চার মাসের মাথায় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ২২টি বইয়ে ৪২১টি ভুল-অসঙ্গতি চিহ্নিত করে পাঠ্যপুস্তক বিশেষজ্ঞ কমিটি। এর মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সবচেয়ে বেশি ৭০টি ভুল-অসংগতি ধরা পড়ে। পরে সেগুলোর সংশোধনী দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর আমরা খুব কম সময় পেয়েছিলাম। এ কারণে কিছু ভুল-ত্রুটি থেকে গিয়েছিল। আর এ কাজটাও তো বিশাল কর্মযজ্ঞ। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য নতুন আঙ্গিকে পাঠ্যবই প্রস্তুত করতে হচ্ছে।

বই ছাপানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে কোনো কৌশল বা তড়িঘড়ি করার বিষয় নেই। সুপরিকল্পিতভাবেই সবকিছু করা হচ্ছে। যে বইগুলো এখনো প্রেসে পাঠানো হয়নি, সেটারও কতগুলো সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। তবে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি- শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে দেরি হবে না।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: