শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম
চৌদ্দগ্রামে বৃষ্টির প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ, প্রখর রোদে মুসল্লিদের কান্না হাতিয়ায় সৈকতে দেখা মিলল ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’ ফসলি জমি কেটে মাটির ব্যবসা: ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই লাখ টাকা জরিমানা মাটি ব্যবসায়ীর লাখ টাকা জরিমানা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদে কুমিল্লার মফিজুর রহমান বাবলু সিনেমা হলে দেখা যাবে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের গল্প দেশে পৌঁছেছেন টাইগারদের নতুন কোচ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া : ডাব্লিউএমও নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল জাতি হিসেবে আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিবনগর সরকার-ধর্মমন্ত্রী

বাংলাদেশ ও একজন শেখ হাসিনা – মোতাহার হোসেন

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হলে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়। পৃথিবীর যে দেশ যত বেশি উন্নত সে দেশের মানুষের জীবনমান ততবেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের মানুষ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৈশ্বিক উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। এটা একজন নাগরিক হিসেবে যেমনি আমাদের জন্য গর্বের তেমনি অহংকারেরও। শেখ হাসিনার নিরন্তর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে সামাজিক,অর্থনৈতিক,মানবিক সকল সূচকে ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জিত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১২ বছর দেশ পরিচালনায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগীসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশসমূহের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের বক্তব্য, বিবৃতি, রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। তথ্যে আরো উঠে এসেছে, দেশের উন্নয়ন, অর্জন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনা,স্কুলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার হ্রাস,বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণ এবং করোনার মধ্যেও জীবন ও জীবিকার চাকা সচল রেখে অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। এসব অর্জন মূলত সম্ভব হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ায়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের প্রদত্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে যে দেশটির কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল সেই পাকিস্তান এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতকে পেছনে ফেলে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সূচক, বিশ্বশান্তি সূচক, গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসসহ এ রকম অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে দেশ দুটির চেয়ে বাংলাদেশ এখন সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। একই সঙ্গে চলমান মহামারি করোনা সহনশীলতা সূচকেও ভারত পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য হচ্ছে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক সূচকে ভারত এবং পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড়ো অর্জন।

আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে, মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ২ হাজার ২২৭ ডলার। একই সময়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ১১৬ দশমিক ৪৪ ডলার। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানও পিছিয়ে আছে। চলতি বছর পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৫৪৩ ডলার। এর আগেও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কখনও অর্থনৈতক সূচক, কখনও সামাজিক বিভিন্ন সূচক প্রকাশ করে। তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অর্থনীতির অনেক সূচকে ভারত এবং পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। দেশের রফতানির পরিমাণ পাকিস্তানের দ্বিগুণ এবং বাংলাদেশি টাকার ক্ষেত্রে এর মূল্য পাকিস্তানের রূপির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার পাকিস্তানের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে জিডিপির আকারের ভিত্তিতে বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় ৪১তম অবস্থানে উঠেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের অবস্থান ৪৪তম। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পাকিস্তানের ২০ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের প্রায় ৪৮দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের রফতানি আয় ৪৩ বিলিয়ন ডলারের, পাকিস্তানের সেখানে ২৩ বিলিয়ন ডলার। পাসপোর্ট সূচক, সাক্ষরতার হার, ক্ষুদ্রঋণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের ২২ কোটির তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪০ লাখ। অথচ ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি।
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৮ বছর আর পাকিস্তানে ৬৭ বছর। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর হার বাংলাদেশে হাজারে ২১ জন, অন্যদিকে পাকিস্তানে হাজারে ৫৯ জন। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব শেষ করছে ৯৮ শতাংশ শিশু, পাকিস্তানে ৭২ শতাংশ। জেন্ডার প্যারিটি ইনডেক্সে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ যেখানে ৫০তম, সেখানে পাকিস্তান রয়েছে ১৫১তম অবস্থানে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ, যা পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ। একইভাবে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মহামারি করোনার কারণে বিশ্বের সবদেশেরই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। করোনার পূর্বে স্বাভাবিক সময়ের প্রবৃদ্ধি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ সময় ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যেখানে শতকরা ৫ শতাংশ, বাংলাদেশের সেখানে ৮ শতাংশ। বাংলাদেশের পুরুষ ও নারীদের গড় আয়ু যথাক্রমে ৭১ ও ৭৪ বছর, ভারতে যথাক্রমে ৬৭ ও ৭০ বছর। ভারতে নবজাতকের মৃত্যুর হার হাজারে ২২ দশমিক ৭৩, বাংলাদেশে সে হার ১৭ দশমিক ১২। ভারতে শিশুমৃত্যুর হার ২৯ দশমিক ৯৪, বাংলাদেশে ২৫ দশমিক ১৪। ৫ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুহার বাংলাদেশে ৩০ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা ভারতে ৩৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সি ৭১ ভাগ নারী সাক্ষর।

-২-

জ্ঞানসম্পন্ন, ভারতে এ হার ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশে ৩০ শতাংশের বেশি নারী শ্রমে নিয়োজিত; ভারতে এ হার মাত্র ২৩ শতাংশ। ছেলেমেয়েদেরে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ভারতে শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশ ১ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে এগিয়ে আছে।

বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ভারতে। শীতের মৌসুমে দেশটির রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি শহর ধোঁয়াশায় ঢেকে যায়। দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। এই ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অবস্থা বাকি দুই দেশের চেয়ে ভালো। বিদ্যুৎতায়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বেশিসংখ্যক মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনার ক্ষেত্রেও এগিয়ে। অপরদিকে, ওয়াশিংটনভিত্তিক কনজারভেটিভ থিংক ট্যাঙ্ক দ্য হেরিটেজ ফাউণ্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৫৬ দশমিক ৫ স্কোর করে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম। অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান যথাক্রমে ১২১ ও ১৫২তম। এখানেও বাংলাদেশ এগিয়ে।

করোনা মহামারি মোকাবিলায়ও দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের কোভিড রেজিলিয়েন্স বা কোভিড সহনশীলতা সূচকে চলতি মাসে পাঁচ ধাপ এগিয়ে বিশ্বের ৫৩টি দেশের মধ্যে ৩৯তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্লুমবার্গের সূচক অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৫৯ দশমিক ৬। যেখানে প্রতিবেশী ভারতের এই স্কোর ৫৬ দশমিক ২ এবং পাকিস্তানের ৫৬ দশমিক ১।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড.কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশের অভূতপূর্ব ও ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা অর্জন করায়। তাঁর মতে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। একই সঙ্গে সামাজিক, মানবিক, অর্থনৈতিক সকল সূচকে ভারত পাকিস্তানসহ এশীয়ার অনেক দেশকে পেছেনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে বর্তমানের মতো ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য্য। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য, দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা আরো বেগবান, গতিশীল হবে। একই সঙ্গে তাঁর সফল নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা উপহার পাবে বাংলার মানুষ।

লেখক : সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক-বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জা জার্নালিস্ট ফোরাম।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: