বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

নারী ব্যাংকার প্রায় ১৬ শতাংশ, বেশি সরকারি ব্যাংকে

নিউজ ডেস্ক :: ** ব্যাংকে মোট কর্মী এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪, নারী কর্মী ২৯ হাজার ৫১৩
**এমএফএসে নারী গ্রাহক ৬২ লাখ ৫০ হাজার ৩১

নারীকে এগিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বর্তমানে শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যে ভালো অবদান রয়েছে নারীর। তাদের এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাশে দাঁড়িয়েছে। এখন নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বেড়েছে ঋণ বিতরণ। ব্যাংকগুলোতেও বাড়ছে নারী কর্মীর সংখ্যা।

আবার করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্তরা যেন ক্ষতি সামলে টিকে থাকতে পারেন, এজন্য সরকার তাদের কয়েক দফায় স্বল্প সুদে প্রণোদনা প্যাকেজে ঋণ দিয়েছে। যদিও উদ্যোক্তারা বলেছেন, এই ঋণ তাদের অনেকে পেয়েছেন আবার অনেকে পাননি। আবার ঋণের ক্ষেত্রে থাকে নানা শর্ত, যা তাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরের ব্যবধানে নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৯৮৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোতে কর্মরত নারী কর্মীর সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। ২০২১ সালের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে নারী কর্মী বেড়েছে এক হাজার ১৩৫ জন।

তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, পুরুষের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে নারী। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী-পুরুষকে সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে (সিএমএসএমই) নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ হয়েছে চার হাজার ৫৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তার আগের বছর ২০২০ সালের একই সময়ে ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৫৫৩ কোটি ৪৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে ৯৮৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন বিনিয়োগের সঙ্গে ঋণের পরিমাণও বেড়ে যায়। একইসঙ্গে বাড়তে থাকে আমদানি-রপ্তানি। নারী উদ্যোক্তা ও রুমঝুম ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহমিদা আহমেদ ঝুমা জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা। ঋণ অনেকেই পাচ্ছেন, আবার অনেকের ক্ষেত্রে ঝামেলা হচ্ছে। নারীদের এগিয়ে নিতে সহজ শর্তে ঋণের পরিধি বাড়ানো দরকার।

অনেক সময় নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা শর্ত দেওয়ার কথাও জানান বেশ কিছু নারী উদ্যোক্তা। এ বিষয়ে নারী উদ্যোক্তা ও রং বাংলা ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্নিগ্ধা দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ক্ষুদ্রঋণ প্রয়োজন আমাদের। এসএমই ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অনেক কাগজপত্র চায়, সেসব কাগজপত্র আমাদের দেওয়া সম্ভব নয়। আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের বয়স পাঁচ বছরের কম হলে ঋণ দেওয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে আমরা যারা নতুন উদ্যোক্তা, তাদের ঋণ হয় না, এটা দেখতে হবে। আমি এগিয়ে গেলে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসে, অন্যের কর্মসংস্থান হয়, বেকারত্ব কমে।

ব্যাংকে বেড়েছে নারী কর্মী
গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট নারী কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫১৩ জনে। যা তার আগের বছর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২৮ হাজার ৩৭৮ জন। হিসাব বলছে, ছয় মাসে ব্যাংকে নারী কর্মী বেড়েছে এক হাজার ১৩৫ জন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত বছরের জানুয়ারি-জুন প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ জন কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী এক লাখ ৫৭ হাজার ২৭১ জন, আর নারী রয়েছেন ২৯ হাজার ৫১৩ জন। অর্থাৎ মোট কর্মীর মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৫০ হাজার ৫৬৭ জন কর্মরত রয়েছেন। যাদের মধ্যে পুরুষ ৪২ হাজার ৫৪৪ জন এবং নারী আট হাজার ২৩ জন। কর্মরতদের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বিশেষায়িত তিন বাণিজ্যিক ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন ১৩ হাজার ৩০৫ জন। যাদের মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ৪৭৭ জন এবং নারী রয়েছেন ১৮২৮ জন। নারীর অংশগ্রহণ ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

অপরদিকে বেসরকারি ৪২ ব্যাংকে কর্মরত আছেন এক লাখ ১৯ হাজার ১১৭ জন। যাদের মধ্যে পুরুষ কর্মী এক লাখ ৩৯৫ জন, আর নারী কর্মী ১৮ হাজার ৭২২ জন। সেখানে নারীর অংশগ্রহণ ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে ৯ বিদেশি ব্যাংকে মোট কর্মরত রয়েছেন তিন হাজার ৭৯৫ জন, তাদের মধ্যে নারী ৯৪০ জন।

আলোচিত সময়ে এসব ব্যাংকে বোর্ড সদস্য হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বোর্ডে সদস্য হিসেবে নারীর অংশগ্রহণের হার বেশি, ১৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা পারুল দৈনিক বাঙলার জাগরণকে বলেন, আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে এখনো নারী পিছিয়ে। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সমানতালে নারী-পুরুষের অবদান প্রয়োজন। শুধু নারী ব্যাংকার নন, পাশাপাশি বাড়ছে নারী গ্রাহকও। এখন ব্যাংকের প্রতিটি কাউন্টারেই চোখে পড়ে নারীদের। কোনো কোনো ব্যাংকে ভোগান্তি এড়াতে তাদের জন্য থাকে পৃথক লাইনের ব্যবস্থা।

মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নারীর অংশগ্রহণ মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) বিকাশ, রকেট ও নগদের নারী গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে নারীরা কর্মস্থল থেকে নিজের টাকা গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে পারছেন। এ সেবায় গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরুষ গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ৯১৭, আর নারী গ্রাহক ছিল ৬২ লাখ ৫০ হাজার ৩১। দেশের ১৯ হাজার ২৪৭টি আউটলেটের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছেন নারী এজেন্টও।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: