শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন

বুড়িগঙ্গা সেতুর এক লেন বন্ধ করে ব্যারিকেড, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

নিউজ ডেস্ক :: ‘বাংলাদেশ-চীনমৈত্রী সেতু’ (১ম) বা পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতুর ওপর ফুটপাত ও সড়কের এক লেন বন্ধ করে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রেখেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। ফুটপাত বন্ধ থাকার কারণে ব্যস্ততম সড়কে যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করছেন চালকরা।

জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ জুন সকালে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এমভি মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চ শ্যামপুর পৌঁছায়। এ সময় চাঁদপুরগামী এমভি ময়ুর-২ একটি লঞ্চ পেছনের দিকে বাক নিতে গিয়ে এমভি মর্নিং বার্ড নামে লঞ্চটিকে ধাক্কা দিলে লঞ্চটি ডুবে যায়।

এ সময় লঞ্চটিতে প্রায় ৬০ যাত্রী ছিল। ডুবুরিরা ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করেন। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ উদ্ধার করতে এসে উদ্ধারকারী লঞ্চটির ধাক্কায় পোস্তগোলায় অবস্থিত বুড়িগঙ্গা সেতুর কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচলে নিষেধ করে মুন্সীগঞ্জ জেলার সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। পরে বুয়েটসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন এসে সেতুটি পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা শেষে সেতুতে ক্ষত জায়গার ওপর বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়।

পরে সেতুটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি মেরামতের জন্য দুই বছর আগে সেতুর ওপর বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড ও লোহারপাত দিয়ে ঘর বানিয়ে সড়কের ফুটপাত ও এক লেন বন্ধ করে রাখা হয় এবং সেতুর নিচে কাজ করতে যাওয়ার জন্য সেতুর দুই পাশে দুটি সিঁড়ি বানানো হয়। দুই বছর পার হলেও সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি এখনো মেরামত বা সংস্কার করা হয়নি।

এদিকে ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বুড়িগঙ্গা সেতুর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সেতুর ওপর থেকে লোহার পাতের ঘর ও বাঁশ সরিয়ে সিগন্যাল লাইট ও রশি দিয়ে সেতুর ওপর ফুটপাত ও এক লেন বন্ধ করে দেয় মুন্সীগঞ্জ জেলার সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন করার পর ক্ষতিগ্রস্ত বুড়িগঙ্গা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহনের চাপ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাবে। এতে সেতুটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে সাধারণ মানুষ ধারণা করছে।

তা ছাড়া সেতুর ওপর দিয়ে শত শত মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপার হয়। সেতুর ফুটপাত বন্ধের কারণে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ততম সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে পোস্তগোলা ব্রিজের ওপর মেনুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করছে ঠিকাদার। এতে সড়কে যানজট লেগে থাকে। পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। ফলে যানজট তীব্র আকারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারি লরিচালক জুয়েল বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে এই সেতু দিয়ে ভারি যানবাহন চালিয়ে যাওয়া অনেকটা অনিরাপদ ও ঝুঁকি মনে করছি। যার ফলে লরি নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে চলাচল করি। পথচারী সামিয়া জাহান জানান, সেতুর ওপর ফুটপাত বন্ধের কারণে ব্যস্ততম সড়ক দিয়ে যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হয়। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা যুগান্তরকে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পদ্মা সেতু তার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবে রূপান্তরিত করেছেন। আর কয়েক দিন পরই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুটি উদ্বোধন করা হলে ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। বুড়িগঙ্গা সেতুটির ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটি মেরামত করা ও ফুটপাত খুলে দেওয়া জরুরি।

ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুল ইসলাম মনু যুগান্তরকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হলে বুড়িগঙ্গা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বেড়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত বুড়িগঙ্গা সেতুটি মেরামত করা খুবই জরুরি।

মুন্সীগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কেরানীগঞ্জ সড়ক উপবিভাগের সড়ক শাখা ২-এর উপনির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেল্লাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বুড়িগঙ্গা সেতুর ক্ষতিগ্রস্থ অংশের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে জানিনা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বুড়িগঙ্গা সেতুর সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষে সেতুর উপর থেকে লোহার পাতের ঘরটি সরানো হয়েছে এবং বাঁশের বেরিকেড সরিয়ে সিগনাল লাইট ও রশি দিয়ে দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে সেতুর ওপর ফুটপাত ও এক লেন বন্ধ রাখা হয়েছে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: