সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

প্রতিষ্ঠিত সাত সন্তানের কারও বাড়িতে ঠাঁই হয়নি মা-বাবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : ১৩ বিঘা জমি ও ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাবা দাহারুল ইসলাম (৯০) ও মা শেরিনা বেগমকে (৮৫) বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন সন্তানরা। এই বৃদ্ধ দম্পতির সাত ছেলেমেয়ের দুজন শিক্ষক, বাকিরাও প্রতিষ্ঠিত। তবু কারও বাড়িতে ঠাঁই হয়নি জন্মদাতা বাবা-গর্ভধারিণী মায়ের। নিরুপায় হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বাল্যবন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন দাহারুল ইসলাম। এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে।

এর আগে বুধবার শ্যামপুর ইউনিয়নের কামাটোলা বাবুপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেন সন্তানরা।

বৃদ্ধ দাহারুল ইসলাম বলেন, ছেলেমেয়েরা আমাদের ভরণপোষণ ও দেখাশোনা করে না। আমরা দুই বুড়াবুড়ি এখন অসহায় জীবনযাপন করছি। আমাদের সাত ছেলেমেয়ে সবাই প্রতিষ্ঠিত। দুজন শিক্ষক ও একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু সবাই আমাদের দূর দূর করে বের করে দিয়েছে। আমরা এখন আমার বাল্যকালের বন্ধু আমিনুলের বাড়িতে আশ্রয়ে আছি।

বৃদ্ধা শেরিনা বেগম বলেন, বড় ছেলে রায়নুল হক ঢাকায় ব্র্যাকে চাকরি করে। মেজো ছেলে বাগির আলম ভারতের বাসিন্দা। সেজো ছেলে ইমরান আলী শাহবাজপুর সোনামসজিদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। ছোট ছেলে সাইদুর রহমান শিবগঞ্জের বড় ব্যবসায়ী। মেজো মেয়ে পারচৌকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর এক মেয়ের স্বামী তারাপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

অসহায় এ বৃদ্ধা আরও বলেন, আমাদের দুজনের ১৩ বিঘা জমি ও ৪০ লাখ টাকা ছিল। ছেলেমেয়েরা সব হাতিয়ে নিয়েছে। সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পর কেউ আশ্রয় না দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

দাহারুল-শেরিনার সন্তান ও শাহবাজপুর সোনামসজিদ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বাবা-মা সব সম্পত্তি আমাদের ভাইবোনের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। সর্বশেষ চার বছর আগে বাগান বিক্রির ৮৫ লাখ টাকার মধ্যে আমি ভাগে ১০ লাখ পেয়েছি। চার বছর ধরে আমি বাবা-মায়ের দেখভাল করি। অন্য ভাইবোনেরা কেউ তাদের খোঁজ নেন না। সম্প্রতি পারিবারিক ঝামেলার কারণে ভাইবোনদের কিছু দিনের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানালেও সাড়া পাইনি। এতে বাবা-মা ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন।

অন্যদিকে আরেক ছেলে রায়নুল ও সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোনে ব্যক্তিগত কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান। তারা বলেন, আপনারা আমাদের সাত ভাইবোনকে একত্রিত করেন, তারপর যা বলার বলব।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত বলেন, সন্তানদের উচিত হবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিকতার সঙ্গে জন্মদাতা ও গর্ভধারিণী বাবা-মাকে আশ্রয় দিয়ে সেবা করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৃহস্পতিবার তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তা দেখে জেলা প্রশাসক এই দম্পতির বিষয়ে খোঁজখবর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

ইউএনও আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের কিছু ফলমূল, খাবার ও অর্থ দেওয়া হয়েছে। পরে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। আমরা সবসময় তাদের পাশে থাকব। কোথাও যাতে এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে লক্ষ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানাই।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: