বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন

একই পরিবারে ৪জন অন্ধ, মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও কেড়ে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা!

বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের একই পরিবারের চারজন জন্মান্ধ। অন্ধ পরিবারটি পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত করছে।

প্রতিবন্ধী ভাতা ও অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় চলে তাদের জীবন-সংসার। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার অবলম্বন একটি পানের বরজ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভূমিদস্যু সাবেক ইউপি সদস্য শিবু চন্দ্র শীল ও তার সহযোগীরা। মাথা গোজার ঠাঁই বসতঘরটি দখল করতে চান তিনি।

ভূমিদস্যু শিবুর ভয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে বলরাম। তার লোকজনের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছে না অন্ধ পরিবারটি এমন অভিযোগ অন্ধ বলরামের। ভূমিদস্যু শিবুর হাত থেকে রক্ষায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

জানা গেছে, উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বিধবা জন্মান্ধ শান্তিরানী দাসের একমাত্র পুত্র বলরাম চন্দ্র দাস। জন্মগতভাবেই বলরাম চন্দ্র দাস অন্ধ। বলরাম চন্দ্রের এক পুত্র ও দুই কন্যা। এর মধ্যে পুত্র সৌরভ দাস ও কন্যা দীপা দাস জন্মান্ধ। ওই পরিবারের ছয়জন সদস্যের মধ্যে চারজন জন্মান্ধ।

অন্ধ পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র অন্ধ বলরাম চন্দ্র দাস। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে চলে তার সংসার। সরকারের দেয়া একখণ্ড জমিই তার বেঁচে থাকার অবলম্বন। ওই জমির ওপর নির্মাণ করেছেন একটি ঘর। ঘরের পেছনে একখণ্ড জমিতে ছিল পানের বরজ। পানের বরজের ওপরেই নির্ভর করে তার সংসার চলে।

অন্ধ বলরামের তিনটি সন্তানই লেখাপড়া করে। বড় মেয়ে দীপা দাস বরিশাল অন্ধ স্কুল থেকে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। একমাত্র ছেলে সৌরভ বরগুনা অন্ধ স্কুলে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। ছোট মেয়ে সঙ্গীতা কুকুয়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।

এ দিকে ওই অন্ধ পরিবারের বলরাম চন্দ্র দাসের নামে ১৯৭৩ সালে ৬২ শতাংশ ভিপি সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেয় সরকার। ওই জমিতেই বলরাম একটি ঘর তুলে এবং পানের বরজ দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে।

ওই বন্দোবস্ত জমি স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য শিবু চন্দ্র শীল তার বাবার সম্পতি দাবি করে উচ্ছেদের জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিন মাস পূর্বে ওই জমিতে দেয়া বলরামের পানের বরজ ভূমিদস্যু শিবু গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ওই অন্ধ পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নেয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন শিবু ও তার লোকজন।

বাড়ি থেকে তাড়ানো ও হয়রানির জন্য শিবু মেম্বার অন্ধ বলরাম ও তার স্ত্রী সন্ধ্যারানীকে আসামি করে দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলা বর্তমানে আদালতে চলমান আছে।

বলরামের স্ত্রী সন্ধ্যারানী দাস সক্ষম হলেও সংসারের সব ভার তার ওপর। চারজন অন্ধ মানুষ দেখভাল এবং মামলার হয়রানিতে দিশেহারা সন্ধ্যারানী।

বলরাম দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দাদা মুই আর কি হরমু। বাইচ্চ্যা থাকার চাইতে মইর্যাজ যাওয়াই ভালো। মুই অন্ধ, মোর মায় অন্ধ, হ্যারপর একটি মাইয়্যা ও একমাত্র পোলাডাও অন্ধ। মোর সোংসারে ছয়জন মানুষ হেইয়্যার মধ্যে চাইর জন অন্ধ। দাদা আমনেই কন ক্যামনে চলে। মোরে সরকার একখণ্ড জমি দেছে হেই জমিতে মুই ঘর বানাইছি ও পানের বরজ দিছি। হেই জমি শিবু মেম্বার দখল করতে চায়। প্রত্যেক দিন মোরে ডর দ্যাহায়। দুইডা মামলা দেছে। পানের বর ভাইঙ্গা হালাইছে। শিবুর ভয়ে মোরা ঘরে গোনে বাইরাইতে পারি না। মুই প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোর পরিবার ও সরকারের দেয়া বন্দোবস্ত জমি রক্ষা ও শিবু মেম্বারের দেয়া মামলা থেকে বাঁচার দাবি হরি।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলরাম দাশের স্ত্রী সন্ধ্যারানী দাশ বলেন, ‘আমি আর পারছি না। চারজন অন্ধ নিয়ে খুব কষ্টে আছি। তারপরও দুঃখ নেই। কিন্তু প্রতিবন্ধী ভাতা ও মানুষের দেয়া সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে চলে আমার সংসার। কিন্তু শিবু মেম্বার আমার এই অন্ধ পরিবারকে উচ্ছেদ করার জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছে। শিবু মেম্বার হয়রানি, ভয়-ভীতি থেকে রক্ষায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দাবি জানাই।’

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য শিবু চন্দ্র শীলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

আমতলী থানার ওসি মো. আবুল বাশার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, ওই পরিবারের সামাজিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: