বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন

১০ এর অধিক মামলায় পলাতক মৃত্যুদন্ড আসামি পলাশ গাজী গ্রেফতার করেছে র‍্যাব

এ আর কাজল (স্টাফ রিপোর্টার) :: র‍্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ রাতে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থানায় গম্ভীর রাতে মুখোশ পরে একই পরিবারের ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্তসহ একাধিক মামলায় যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত খুনী পলাশ গাজী @েজালাল গাজী হেদাত ভাঙ্গা পলাশ (৪১), পিতা-মোঃ চান্দু গাজী, সাং-নেমদী, থানা-বাউফল, জেলা-পটুয়াখালীকে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী ওরফে দাঁত ভাঙ্গা পলাশ ২০১০ সাল থেকে ডাকাতি, মাদক, চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মে ভাড়াকৃত সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করত। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি এলাকায় মমতাজ উদ্দিন নামে একজন ব্যক্তির সাথে তার ছোট ভাই সুলতান আহমেদকে খুন করার বিষয়ে তাদের চুক্তি হয়। ভিকটিম সুলতান ও বড় ভাই মমতাজের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এক পর্যায়ে মমতাজ ছোট ভাই সুলতানকে খুন করার জন্য পলাশ ও তার বাহিনীকে ৫ লক্ষ টাকা ও ভুরুঙ্গামারি থানায় ০১ বিঘা জমি লিখে দেয়ার বিনিময়ে চুক্তি করে। মমতাজের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর ধৃত আসামি পলাশের নেতৃত্বে ৬ জন (নজরুল হোমনজু, আমির, জাকির, জালাল @েপলাশ, হাসমত ও মমতাজ) মিলে ২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি গভীর রাতে ভুরুঙ্গামারি উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামে মমতাজের নিজ বাড়িতে বসে সুলতানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি রাতে পলাশের নেতৃত্বে অন্যান্য সহযোগীরা মুখোশ পরে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিহত সুলতানের বাড়িতে দল বেঁধে হামলা চালায়। প্রথমে তারা সুলতানের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে তাকে মুখমন্ডলসহ সারাশরীরে এলোপাতাড়ী কোপাতে থাকে। এসময় তার স্ত্রী হাজেরা বেগম বাঁধা প্রদান করলে তাকেও পিঠে এবং পেটে ধারালো রামদা দ্বারা কোপানো হয়। এরপর সুলতানকে তারা আবারও এলোপাতাড়ী কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। শব্দ শুনে পাশের ঘর থেকে দুই নাতনি রুমানা ও আনিকা ছুটে এসে বাঁধা দিলে তাদেরকেও তারা বুকে এবং পেটে-পিঠে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে হত্যা করে। এভাবেই তারা একই পরিবারের ০৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে।

ঘটনার পরবর্তী দিন সকালে নিহত সুলতানের ছেলে হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ভুরুঙ্গামারি থানায় কয়েকজন কে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ঘটনার কিছুদিন পর ভুরুঙ্গামারি এলাকায় অন্য একটি হত্যা মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ০২ জনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা স্বপরিবারে সুলতান হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং তাদের সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে যেখান থেকে গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী দাঁত ভাঙ্গা পলাশের নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্ত শেষে। তদন্তকারী কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন, পলাশ গাজী (জালাল গাজীসহ ০৭ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালত গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখ অভিযুক্ত হত্যাকারী মমতাজ উদ্দিন, পলাতক পলাশ গাজী সহ ০৬ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অপর একজনকে খালাস প্রদান করেন। রায় শুনানির দিন মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত ০৬ জন আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও পলাশ গাজী গাজী ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল।

এছাড়াও ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বগুড়া জেলার শেরপুরের মির্জাপুর এলাকায় মাইক্রোবাস চুরির উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসের চালক নুরুল হককে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ বগুড়ার শেরপুরের মির্জাপুর এলাকায় একটি পুকুরে ফেলে রাখে পলাশ গাজী ও তার সহযোগীরা। উক্ত হত্যার ঘটনায় গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বিজ্ঞ আদালত গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী @জালাল গাজীসহ মোট ০৯ জন আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। উক্ত ০৯ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পলাশ গাজী @জালাল গাজী, নজরুল ইসলাম মনজু এবং আমির হামজা ২০১৪ সালের কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারি এলাকায় একই পরিবারের ৪ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডেরও আসামি ছিল। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: