বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন

আব্দুল মজিদ অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার

এ আর কাজল (স্টাফ রিপোর্টার) :: আর শোভন (স্টাফ রিপোর্টার): উক্ত আসামির বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭০ সালে গঠিত জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত তালিকা মোতাবেক ধৃত আসামি মজিদ পূর্বধলা থানা জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী এবং পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর হিসেবে গঠিত ঘৃণা রাজাকার বাহিনীর অত্যাচারে বাংলাদেশের আপামর জনতার উপর চলে অমানবিক ও পৈশাচিক নির্যাতন। ধৃত আসামি মজিদ রাজাকারদের প্রধান বাহিনী আল-বদর পুর্বধলা রামপুর থানা কমিটির প্রধান ছিল।

পূর্বধলা রামপুর মৌদাম গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকসহ তার আপন দুই ভাই এবং পাঁচজন চাচাতো ভাই মিলে একই বাড়িতে মোট সাতজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতাক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করত। এজন্য আল-বদর কমিটির প্রধান আব্দুল মজিদের শত্রুতে পরিণত হয় তারা। ১৯৭১ সালে ২১ আগস্ট দুপুরে আব্দুল মজিদ তার দলবল নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়িতে আক্রমন করে। সে সময় বাড়িতে অবস্থানরত আব্দুল খালেকসহ মুক্তিবাহিনীর সকলকে এক এক করে আসামী ও তার সহযোগিরা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের লাশটি পার্শ্ববর্তী কংস নদীতে ফেলে দেয় তারা এবং অপরাপর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ কোকখালী নদীতে বস্তাবন্দি করে ফেলে দিয়ে আসে। এই হত্যাকান্ডের পাশাপাশি তারা আব্দুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় মৃত আব্দুল খালেকের ভাই আব্দুল কাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে কোন রকমে প্রাণ বাঁচায়।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আব্দুল মজিদসহ ৩৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে আব্দুল কাদের। পরবর্তীতে মামলার গভীর তদন্তে আরও তিন জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে এবং আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত সাতটি অভিযোগই প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমানিত হলে মোট সাতজন আসামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান করে বিজ্ঞ আদালত। এটি মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৩৬তম রায়। বিচার চলাকালে এই মামলার দুইজন আসামি (আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমান) মারা যায় এবং রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যায় আরও দুই আসামি (রদ্দিন মিয়া ও আব্দুস সালাম বেগ)। উক্ত মামলার আরও দুইজন আসামি (আব্দুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ) বর্তমানে পলাতক রয়েছে। এদিকে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালীন ২০১৫ সালে আব্দুল মজিদ তার নিজ এলাকা। ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে এবং ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে। এরপর তার আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করে একটি কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পলাতক জীবন শুরু করে। ২০১৫ সাল থেকে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন সে কখনই আদালতে হাজিরা দেয়নি।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল মাদারীপুর জেলার মাদারীপুর সদর এলাকা হতে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক আসামি মোঃ আব্দুল মজিদ (৮০), পিতা-মৃত মিরাজ আলী, সাং-পূর্ব মৌদাম, থানা-পুর্বধলা, জেলা নেত্রকোনাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফরাকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধিন।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: