সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৫:১৬ অপরাহ্ন

ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র জব্দ করেছে র‌্যাব-৩

এ আর কাজল (স্টাফ রিপোর্টা) :: ১। সাম্প্রতিক সময়ে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক তোড়জোড় চালানোর পরিকল্পনা করছিল। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ার ফলশ্রæতিতে র‌্যাব উক্ত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। র‌্যাব-৩ বিগত ০৬ মাসে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ৫৯টি অভিযান পরিচালনা করে ২০৪ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

২। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫/০২/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা হতে রাত পর্যন্ত র‌্যাব-৩ এর কয়েকটি আভিযানিক দল একযোগে রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, ওয়ারী, খিলগাঁও, বংশাল, সবুজবাগ ও শাহজাহানপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ রাকেশ @ কালাচাঁন (১৯), পিতা-মোঃ ইমরান, সাং-বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির মোড়, থানা-বংশাল, ডিএমপি ঢাকা এবং ২। মোঃ মান্নান (৪০),পিতা-মৃত কুদ্দুস মিয়া, সাং-সোনাপুর, থানা-রাজনগর, জেলা-মৌলভীবাজার। এছাড়াও উক্ত চক্রের অন্যান্য সক্রিয় সদস্য ৩। মোঃ ইমরান গাজী (২৯), পিতা-মৃত বাচ্চু গাজী, সাং-ব্রাহ্মণসাকুয়া, থানা-চাঁদপুর সদর, জেলা-চাঁদপুর, ৪। মোঃ আকাশ (২৫), পিতা-আক্কাস, সাং-কালিবাড়ী, থানা-কেরানীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা,ডিএমপি ৫। মোঃ ইসরাফিল (১৯), পিতা-মৃত সিরাজ মিয়া, সাং-আমগাঁও, থানা-সোনারগাঁও, জেলা-নারায়নগঞ্জ, ৬। মোঃ সিয়াম (২০), পিতা-মোঃ মিন্টু, সাং-চাংখারপুল নাজিম উদ্দিন রোড, থানা-লালবাগ, ডিএমপি ঢাকা, ৭। মোঃ মানিক (২৪), পিতা-মৃত জলিল, সাং-চরহোগলা, থানা-মেহেন্দীগঞ্জ, জেলা-বরিশাল, ৮। নাহিদ পারভেজ (৩৭), পিতা-মৃত আব্দুল জব্বার, সাং-মহারাজপুর, থানা-দিনাজপুর সদর, জেলা-দিনাজপুর, ৯। মোঃ আরাফাত (১৯), পিতা-মোঃ মিলন, সাং-বেপারীপাড়া, থানা-জামালপুর সদর, জেলা-জামালপুর, ১০। মোঃ শাকিল (১৯), পিতা-সাইদুর রহমান, সাং-পাতিল বাড়ীরচর, থানা-সাঘাটা, জেলা-গাইবান্ধা, ১১। মোঃ রিয়াদ (১৯), পিতা-মোঃ মোশারফ, সাং-রহমতপুর, থানা-সন্দীপ, জেলা-চট্রগ্রাম, ১২। মোঃ আব্দুল রব মিয়া (২৬), পিতা-মোঃ নুর ইসলাম, সাং-আব্দুল্লাহপুর,থানা-রায়পুরা, জেলা-নরসিংদী, ১৩। মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৮), পিতা-মৃত সমন মিয়া, সাং-আব্দুল্লাহপুর, থানা-রায়পুরা, জেলা-নরসিংদী, ১৪। মোঃ রাসেল (২১), পিতা-নুর ইসলাম, সাং-বটতলা, থানা-ইন্দুরকান্দি, জেলা-পিরোজপুর, ১৫। মোঃ ইসমাইল (৩২), পিতা-চুনু মিয়া, সাং-সাহেবগঞ্জ, থানা-ফরিদগঞ্জ, জেলা-চাদঁপুর, ১৬। লোকনাথ রাজ বংশি (৩২), পিতা-মৃত উত্তম রাজবংশী, সাং-জালুয়াপাড়া (মাঝিপাড়া), পোড়াবাড়ী, থানা-সাভার, জেলা-ঢাকা, ১৭। শম্ভু চন্দ্র দাস (৪০), পিতা-মৃত রতন চন্দ্র দাস, সাং-মালিপাড়া, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লা ১৮। মোঃ শামীম (৪৬), পিতা-মোঃ রমজান আলী, সাং- কদমতলী, থানা-সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলা-নারায়নগঞ্জ, ১৯। মোঃ রাজু (২১), পিতা-মোঃ আক্কাস, সাং-চৌখা বাউসী উত্তর পাড়া, থানা-সরিষাবাড়ি, জেলা-জামালপুর, ২০। মোঃ মোজাফ্ফর (২৪), পিতা-মৃত রুস্তম মিয়া, সাং-উত্তর সাংগর অধিকারী, থানা-সুজাতপুর, জেলা-হবিগঞ্জ, ২১। মোঃ হাসান (২১), পিতা-মৃত তৌহিদ, সাং-রামপুরা সবুজবাগ থানা এলাকায় ভাসমান, ২২। মোঃ হৃদয় (২০), পিতা-মোঃ বিল্লাল হোসেন, সাং-কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় ভাসমান, থানা-ঢাকা রেলওয়ে থানা, ডিএমপি, ঢাকা, ২৩। মোঃ আরিফ (১৯), পিতা-মোঃ দুলাল শিকদার, সাং-বদরখালী, থানা-বরগুনা সদর, জেলা-বরগুনা, ২৪। মোঃ আতিকুল ইসলাম (১৯), পিতা-মোঃ কাওছার ইসলাম, সাং-বগারচর, থানা-বকশীগঞ্জ, জেলা-জামালপুর, ২৫। মোঃ হেলাল (৩২), পিতা-মোঃ বেল্লাল হোসেন, সাং-শেখেরগাঁও, থানা-মেঘনা, জেলা-কুমিল্লা, ২৬। মোঃ রুবেল (২৭), পিতা-মৃত ফজলুল হক, সাং-শেখবাড়ী(শেখপাড়া), থানা-জামালপুর সদর, জেলা-জামালপুর, ২৭। মোঃ রতন @ মানিক (১৯), পিতা-মৃত শেখ ইদ্রিছ, সাং-মতিঝিল থানায় এলাকায় ভাসমান, থানা-মতিঝিল, ডিএমপি, ঢাকা, ২৮। মোঃ তছলিম (১৯), পিতা-মৃত লাল মিয়া, সাং-মতিঝিল থানায় এলাকায় ভাসমান, থানা-মতিঝিল, ডিএমপি, ঢাকা এবং ২৯। মোঃ আনোয়ার (১৯), পিতা-মৃত করিম, সাং-মতিঝিল থানায় এলাকায় ভাসমান, থানা-মতিঝিল, ডিএমপি, ঢাকাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকালে উক্ত আসামীদের নিকট হতে সুইচ গিয়ার, চাকু, ক্ষুর, এন্টিকাটার, কাঁচি, বেøড, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র জব্দ করা হয়।

৩। গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, যেকোন উৎসবকে কেন্দ্র করে এদের তৎপরতা বাড়ে। ১৪ ফেব্রæয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন এবং বই মেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় উৎসব মুখরতা তৈরী হয়। এসুযোগে অত্র এলাকা যেমন; শাহবাগ, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁওসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে আসছিল এই চক্রটি। এছাড়াও আসন্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তথা ২১ শে ফেব্রæয়ারিকে কেন্দ্র করে নাশকতা তৈরীর মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাই করারও পরিকল্পনা ছিল এই চক্রটির।

৪। সাধারণত এসব এলাকায় ছিনতাইকারী এই চক্রটির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। এছাড়াও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন অলি গলিতে ওৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করেনা। সাম্প্রতিক সময়ে খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, কমলাপুর, মতিঝিল, হাতিরঝিল, শাহবাগ, পল্টন, মানিকনগর, নন্দীপাড়া, গুলিস্তান এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের বেশ তৎপরতা পরিলক্ষিত হওয়ায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এ সাঁড়াশি অভিযানটি পরিচালনা করে।

৫। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যেসকল ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাদেরকে আগে থেকে অনুসরণ করতে থাকে এবং অনুসরণকৃত ব্যক্তির সাথে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে। একপর্যায়ে কথা বলতে বলতে উক্ত ব্যক্তিকে সুবিধামতো কোনো জায়গায় নিয়ে যায় এবং সেখানে ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত হয়। চক্রের একজন সদস্য উক্ত ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় ও মারধর শুরু করে। লোকজন এগিয়ে আসলে বলে, নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এ মারামারি। ততক্ষণে ছিনতাইয়ের কাজটি তাদের চক্রের কেউ একজন সেরে ফেলে। এছাড়াও তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোন রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীদেরকে টার্গেট করে তারা অন্য একটি রিক্সা অথবা সিএনজি নিয়ে উক্ত ব্যক্তির পিছনে যেতে থাকে। ছিনতাইকারীদের সুবিধামত স্থানে পৌঁছে যাত্রীকে এবং চালককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিক্সা ও সিএনজি যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেয়।

৬। ছিনতাইকারীরা তাদের ছিনতাইকৃত অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা করে এবং কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। উক্ত চক্রের সদস্যদের রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ীভাবে কোন বাসস্থান নেই। তারা সকলেই রাজধানীর ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। উক্ত চক্রের সদস্যদের মধ্যে প্রায় সকলের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে উক্ত চক্রের সদস্যরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হওয়ার পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়ায় বলে জানায়।

৭। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাড়াঁশি অভিযান চলমান রাখা এবং এসকল ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার মাধ্যমে জনজীবনে স্বস্তি, মানুষের সুষ্ঠু ও নির্বিঘœ চলাচলা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ। রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রাজধানীতে আগত যাত্রীরা যাতে নিরাপদে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করে নির্বিঘেœ স্বস্তির সাথে বাড়ী ফিরে যেতে পারেন এলক্ষ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

৮। ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: