শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন

বরিশালের দুর্গাসাগর দীঘিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য

শামীম আহমেদ, বরিশাল :: কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার নায়ক তাঁর প্রেয়সীর মন পাওয়ার জন্য ‘সমস্ত বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে’ এনেছিলেন ১০৮ টি নীল পদ্ম। সাহিত্যে নীল পদ্মের এরকম সরব উপস্থিতি থাকলেও বাস্তবে তার দেখা মেলে না। পাশাপাশি সাহিত্যে সাদা পদ্মের বিষয়ে কোনো ছন্দ বা লেখা চোখে না পড়লেও বাস্তবে তা দেখা যায় দুর্গাসাগর দীঘিতে।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘিতে এবার প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া নতুন আকর্ষণ এই সাদা পদ্ম।

সরেজমিনে দূর থেকে দুর্গাসাগর দীঘির দিকে তাকালে মনে হয়, সবুজ ক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে অসংখ্য সাদা বক। যতই কাছে যাওয়া যায়, ততই মনে হয় কোথায় বক, এ যে দেখছি বিরাট আকারের ফুল। পানির ওপর গোল পদ্মপাতাগুলো ভেসে আছে। এর ফাঁক দিয়ে মাথা উঁচু করে ফুটে আছে সাদা পদ্ম। কোনোটি সম্পূর্ণ ফোটা, কোনোটি আধ-ফোটা, আবার

কোনোটি বা শুধুই কলি। “জলজ ফুলের রাণী বলা হয় পদ্মকে”। ফুটে থাকা ফুল শুধু দুর্গাসাগর দীঘির নয়, সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলছে প্রকৃতিরও।
এ বছরেই প্রথম প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া পদ্ম ফুল সৌন্দর্য আকৃষ্ট করায় দুর্গাসাগর দীঘিতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

সরেজমিনে দুর্গাসাগর দীঘিতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকৃতি যেন তার সবটুকু সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে। দীঘির দক্ষিণ দিকের বিশাল অংশ জুড়ে দেখা মিলবে সাদা পদ্মের। বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে যেন পদ্মের সমাহার।

দুর্গা সাগর দীঘির দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার তপন লাল লস্কর এর সাথে কথা হলে জানান, প্রাকৃতিকভাবে এ বছর জন্ম নেয় পদ্মফুল। বর্ষার শুরুতেই দীঘির বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে ফুটে আছে সাদা রং-এর পদ্ম। যা দেখলে মন-প্রাণ আর চোখ জুড়িয়ে যায়। পাপড়ি মেলে প্রকৃতি প্রেমীদের স্বাগত জানায় জলজ ফুলের রানী পদ্ম। এমন অপরূপ দৃশ্য যেন ভ্রমণপিপাসুদের প্রতিনিয়ত হাতছানি দিচ্ছে।

এ ছাড়াও তপন লাল লস্কর আরো জানান, বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান স্যারের নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়ার কারণেই দুর্গাসাগরে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।

এছাড়া বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় করে বর্তমানে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মজিবুর রহমান জানান, পদ্ম এটি বহুবর্ষজীবী গাছ। এর কালতানো। পাতা গোল, প্রায় ৪০ সেমি চওড়া। সরু কাঁটাযুক্ত লম্বা বোটার ফুলগুলো সুগন্ধিযুক্ত, পাপড়ি সাদা ও পুংকেশর হলদেটে। একটি ফুলে ১২ থেকে ১৮টি পাপড়ি থাকে। বর্ষা থেকে শরৎকালে এ ফুল বেশি ফোটে। পানির ওপরে পাতা ও ফুল ভাসমান অবস্থায় থাকে। মূল পানির নিচে কাদায় আবদ্ধ।

দুর্গা সাগর দীঘিতে পদ্ম ফুল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিনই ছেলে-মেয়ে, পরিবার-পরিজন আর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভিড় করছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রকৃতিপ্রেমীরা।

বাবুগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছি। একটু প্রশান্তির জন্য দুর্গা সাগর দীঘিতে পদ্ম ফুল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এসেছি। এখানে ঘুরতে আসলেই যেন মন ভাল হয়ে যায়। এ বছর পদ্ম ফুলের কারণে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ভ্রমণে।

উলে­খ্য, করোনা ভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বরিশাল জেলা প্রশাসকের আদেশক্রমে দীঘি এলাকায় সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা অবস্থান ও সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রবেশ করা সহ ১১ টি শর্তসাপেক্ষে গত আগস্ট মাস থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দুর্গা সাগর।

দুর্গা সাগর দীঘিতে পর্যটকের মধ্যে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার দেশি-বিদেশি মানুষ রয়েছেন। তবে পর্যটকদের জন্য আবাসন ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও নিশ্চিত হয়নি বলেও ঘুরতে আসা অনেক পর্যটক অভিযোগ করেন। এসব সমস্যা সমাধান করলে দুর্গা সাগর দীঘিতে আরও বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২০ বাঙলার জাগরণ
কারিগরি সহযোগিতায়: